It is as if someone is touching the face and eyes with a light hand. Kritanta tried to understand by closing his eyes.
মুখে, চোখে কেউ যেন হালকা হাতে আঙ্গুল বুলিয়ে দিচ্ছে। চোখ বুজেই বোঝার চেষ্টা করলো কৃতান্ত। তারপর খুব ধীরে ধীরে চোখ খুলল, এমন সন্তর্পনে যেন চোখখোলার ধাক্কায় স্বপ্নটা না ছিঁড়ে যায়। অসংখ্য হলুদ রঙের প্রজাপতি তার উপর উড়ে বেড়াচ্ছে, একটুও না নড়ে চোখের পাতা পড়াটাও সামলে বুঝতে চেষ্টা করল, সত্যিটা সত্যি কিনা,-----
সত্যি.... আশ্চর্য !
প্রজাপতিরা বুঝতে পারে নাকি ?
আজ সকাল থেকেই যা ঘটছে সবটাই স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে।
কোনোদিন আসবে না, আসা হবে না, এটাই ঠিক ছিল।
কিন্তু... হ্যাঁ কিন্তু, ডাক্তার বলার পর থেকেই শুরু টানা পোড়েনের।
শোনা কথা শোনাই থেকে যাবে?
না হয় সবটা হলো না, অর্ধেকটাই বা কম কি?
শেষে..........
এই ইউক্যালিপ্টাসের গন্ধ, সবুজ বন, ছবির মত বন বাংলো, অদ্ভুত নির্জনতা - আর এই অপার্থিব ভালোবাসার ছোঁয়া, যেন বলছে তোমার খুব কষ্ট, না? এসো আদর করে দিই ........
সন্ধ্যে...........
আজকাল সন্ধ্যে হলেই মন খারাপ লাগাটা খারাপতর হয়ে ওঠে, কিচ্ছু ভালো লাগেনা, পুরোনো সব কথা মনে পড়ে। এখানকার নির্জনতা আরো বেশী করে চেপে ধরেছে---
না..... না...... না.....
চৌকিদার... চৌকিদার.....
হে বাবু ডাকছিস?
তৃতীয় পেগ টা শেষ করার পর সবে গলানো জ্যোৎস্নায় ধুয়ে যাওয়া সবুজ অন্ধকারটাকে একটু একটু ভালোবাসতে শুরু করেছি.....
বাবু ,খাবি না?
তু.. তু.. তুমি কে?
খিল খিল হাসির টুকরো ছড়িয়ে সে বলল আমি সবরমতিয়া, চৌকিদারের বিবি।
হাঁফ ছেড়ে বললাম, দাও।
সবরমতিয়া একটা কালো প্রজাপতির মত হাসির ডানা মেলে অন্ধকারে মিশে গেল।
দিন.......…
চিকন শীতার্ত রোদ কৃতান্তর চোখের বন্ধ পাতার উপর পিছলে যায়, আর একটু বেশী গুটিসুটি দিয়ে শুতে গিয়েও... চটকা ভাঙে গাড়ীর তীব্র হর্ণের শব্দে, কানে এসে ধাক্কা দেয় কচি গলার আনন্দের উচ্ছাস।
ঘুমভাঙ্গা চোখে বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই, চোখে পড়ে বাংলোর হাতায় একটি পরিবার। স্বামী, স্ত্রী, আর ছোট্ট একটি ছেলে।
ছেলেটি গাড়ী থেকে নেমেই মা এর হাত ছাড়িয়ে দৌড়তে শুরু করেছে একঝাঁক হলুদ প্রজাপতির পিছনে।
তারা যেন বলছে তোমার খুব আনন্দ , না? এসো খেলি তোমার সাথে,
আচ্ছা প্রজাপতিরা কি সব বুঝতে পারে?
ভদ্রলোক চৌকিদারের সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে,
চৌকিদার আমার দিকে দেখায়, ভদ্রলোকটি মুখ তুলে একবার দেখে তারপর চটপটে পায়ে সিঁড়ির ধাপ বেয়ে আমার সামনে এসে হাত জোড় করে, ব্যাস.. আমাকেও করতে হয়।
সমস্যা সামান্যই... টাউন থেকে সব তুলেছে শুধু চালের ব্যাগটা তুলতে ভুল হয়ে গেছে, ড্রাইভার এক্ষুণি যাচ্ছে আনতে, তাই----শুধু এই বেলার জন্য যদি কিছুটা......
থামিয়ে দিলাম, শোনামাত্র পরিষ্কার নাকচ করে দিলাম মুখের উপরে।
হতভম্ভ ভদ্রলোকের সামনে চৌকিদারকে ডেকে বলে দিলাম ....
আজ ওনারা আমার মেহেমান, খানা একসাথ খায়েঙ্গে।
আয়া বাত সমঝ মে?
জি বাবু।
ভদ্রলোক কি বলবেন, কি করবেন বুঝতে না পেরে.....
ইত্যবসরে আমি হাত বাড়িয়ে বললাম, কৃতান্ত চ্যাটার্জ্জী
দুহাতে আমার হাত ধরে বললেন, অভিষেক রায়চৌধুরী।
দুপুর.......
দুপুরে বহুদিন পর কোনো একজন মহিলার হাতে বেড়ে দেওয়া খাবার খেলাম, অন্য এক অনুভূতি।
বাচ্চাটি ঝকঝকে, চটপটে, আর প্রাণবন্ত আমার সাথে খুব ভাব হয়ে গেল,-----
ভদ্রলোক ও দারুন আমুদে, ভালোমানুষ, কথায় কথায় অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। আর মিসেস রায়চৌধুরী ? প্রচন্ড মা, ঠিকঠাক বউ, সুন্দর গৃহিণী, সবকিছু নিখুঁত...আমার মন ভালো হয়ে গেল।
ভাগ্যিস......
রাত.......
এখন অনেক রাত......
পাশের ঘরে বাচ্চাটার আর কোনো উসখুসনির শব্দ নেই,
নিঃশব্দ সব নিঝুম চুপচাপ।
আজ ঘুম আসছে না......
নিঃশব্দে দরজাটা খুলতেই, এক ফালি চাঁদের আলো লুটিয়ে পড়ে পা জড়িয়ে ধরল। মনে মনে বললাম, অমন করছিস কেন ? তোদের কাছেই তো যাচ্ছি।
বারান্দার শেষপ্রান্তে থামে হেলান দিয়ে, যতদূর চোখ যায় মেলে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম, কতক্ষন জানিনা।
ঠান্ডা লেগে যাবে তো ... চাদরটা ঠিক করে গায়ে দাও... রিনরিনে চেনা শাসনের শব্দ বাজে।
চমক ভাঙে পরিচিত ঠাণ্ডা আঙুলের আলতো ছোঁয়ায়।
আবার অসংখ্য হলুদ প্রজাপতির উড়ান বুক জুড়ে।
প্রজাপতি রাতে ওড়ে?
উঁহু পাইপ ধরিও না--- এত স্মোক কর কেন ? এখনো অবাধ্যই রয়ে গেলে।
তারদিকে পিঠ করেই জিজ্ঞাসা করলো---
সারাটা দিন দেখা দিলে না কেন ?
উত্তরে সে বলল---
তুমিই তো আবৃত্তি করতে...
" রাতের সব তারাই তো থাকে,
দিনের আলোর গভীরে"
তাই... রাত বেছে নিলাম, ভুল ?
কৃতান্ত বলে, জানো এখন আমার স্বপ্ন পূরণের পালা চলছে। একা এসেছিলাম, কিন্তু একটা রাত দু’জনে একসাথে এখানে কাটাতে চেয়েছিলাম কোনো একদিন। সেটাও পূর্ন হয়ে গেল। মনে আছে? এমন একটা রাতের পর যদি....
মেয়েটি বললো, তুমি চুপ........
কৃতান্ত বললো, উঁহু কোনো কথা নয় আমি বলবো তুমি শুনবে, বুঝেছ কন্যে ? প্রজাপতির ডানায় মত ভ্রু জোড়া বাঁকিয়ে তুলে অবাক রাতমাখা চোখ দুটো আমার চোখের উপর রাখতেই...হ্যাঁ, কথা ছিল এই রাতের পর যে আগে চলে যাবে পৃথিবী ছেড়ে, অন্যজন তাকে খুঁজতে আসবে, এখানে, একবার হলেও আসবে..... তুমি এসো কিন্তু-----
ওর দুচোখে টলটলে ভোরের গন্ধ মাখা শিশির বিন্দুর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে কৃতান্ত ....
রাত শেষ হয়ে গেছে, ঘরে যাও...
কৃতান্ত ধীর পায়ে বারান্দার সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে অস্ফুট কুয়াশা মোরা সবুজে মিশিয়ে দেয় মনের শব্দ.......
আমি নেমে যাব পরের স্টেশনে... তুমি যাবে একা.......
কলমেঃ দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়
COMMENTS